প্রশ্ন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে নেশন - কে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন ?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নেশন - কে একটি মানস পদার্থ বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন । যার অর্থ — “একত্রে দুঃখ পাওয়া , একত্রে দেশের গৌরবময় স্মৃতি গড়ে তােলা , এবং একত্রে ভবিষ্যতের মহতী আশায় উদ্দীপিত হওয়া’ । এবং এই নেশনের উৎস হলাে সাধারণ সম্মতি , সকলে মিলিয়া একত্রে জীবন বহন করিবার সুস্পষ্ট ইচ্ছা”।
প্রশ্ন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গ্রন্থের নাম লেখ যেখানে জাতীয়তাবাদ বিষয়ের উল্লেখ আছে ।
উত্তর : ‘ন্যাশনালিজম’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদ বিষয়ের উল্লেখ করেছেন ।
প্রশ্ন : জাতীয়তাবাদকে ‘সভ্যতার বিপদ’ হিসাবে কে মনে করতেন এবং কেন ?
উত্তর : জাতীয়তাবাদকে ‘সভ্যতার বিপদ’ বলে মনে করতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । করাণ , তার ধারণা ছিল যে , জাতীয়তাবাদ এমনই এক সংকীর্ণ আদর্শ যা অন্ধ দেশভক্তি গড়ে তােলে এবং জাতীয় আত্মম্ভরিতা ও জাতিগত আধিপত্যের তত্ত্ব রচনার পথকে প্রশস্ত করে । এক কথায় , জাতীয়তাবাদের উন্মাদনায় জাতীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেখা দেয় বিকৃত বা উগ্র মনােভাব যাকে সংযত করার জন্য সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন কোনাে কর্তৃপক্ষ বিশেষ না থাকায় বিশ্বসভ্যতার ও বিশ্ব মানবতার অপরিসীম ক্ষতি সাধিত হয় । মূল কথা হল জাতীয়তাবাদ জাতির ভালােগুণগুলিকে বিনষ্ট করে , উগ্রতাকে তুলে ধরে যা সাম্রাজ্যবিস্তারে আগ্রাসী করে তােলে । তাই তিনি জাতীয়তাবাদকে ‘সভ্যতার বিপদ’ বলে মনে করতেন ।
প্রশ্ন : জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড কোন সালে সংগঠিত হয়েছিল এবং ওই ঘটায় রবীন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া কি ছিল ?
উত্তর : জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছিল ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল । পাঞ্জাবের অমৃতসরে ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ’ নামক স্থানে বহু মানুষ ‘রাওলাট আইন’ প্রত্যাহারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে এক সভায় মিলিত হন । এই সময়ে পঞ্জাব - এর তৎকালীন পুলিশকর্তা জেনারেল ডায়ার - এর নির্দেশে গুলিবর্ষণ করা হয় । এবং এর ফলে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে । এই জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন । তিনি পত্র মারফত তৎকালীন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড চেমসফোর্ডকে জানান যে , ব্রিটিশদের দ্বারা অত্যাচারের পীড়িত দেশবাসীর পাশ এসে দাঁড়াবার জন্য তিনি ব্রিটিশদের দেওয়া এই উপাধি ব্রিটিশ সরকারকে ফিরিয়ে দিলেন ।
পুশ্ন : রবীন্দ্রনাথ কত সালে কী উদ্দেশ্যে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেন ?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেন । ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল রবীন্দ্রনাথের মধ্যে যে বিশ্ববােধ ছিল তাকে রূপায়িত করা । তিনি চেয়েছিলেন যে ‘বিশ্বভারতী’নামক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষার মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠুক । বিশ্বভারতীর মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব ভারতের কাছে এসে পৌছাক এবং ভারতও বিশ্বকে আপন করে নিক ।
প্রশ্ন : পাশ্চাত্য সভ্যতা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের দারণা কী ছিল ?
উত্তর : ( ক ) পাশ্চাত্য সভ্যতার স্বার্থপর, উগ্র, নৃশংস রূপ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখেছিলেন । ( খ ) পাশ্চাত্য সভ্যতা রাষ্ট্রীয় শক্তি ও পার্থিব সম্পদের উন্নতির উপর দণ্ডায়মান । ( গ ) পাশ্চাত্য সভ্যতায় অত্যধিক গুরুত্ব পায় জাতি , জাতীয়তা , জাতীয়তাবাদ , রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা প্রভৃতির মতাে কতকগুলি রাজনৈতিক ধারণা এবং এই সভ্যতায় মানুষের আত্মশক্তি , ধর্ম, আদর্শ ও নীতিবােধের মতাে শাশ্বত ধারণাগুলি কোনরূপ মূল্য পায় না । ( ঘ ) পাশ্চাত্য সভ্যতা হল ‘দন্তর সভ্যতা ’ যার হিংস্র দাঁতগুলি বেরিয়ে পড়ে সাম্রাজ্যবাদের চেহারা নিয়ে ।
প্রশ্ন : রবীন্দ্রনাথ তার রাজনীতি ধারণা অবতারণা করেছেন কোন কোন্ রচনায় ?
উত্তর : ‘ স্বদেশী সমাজ ’, ‘ আত্মশক্তি ’ ‘কালান্তর ’ প্রভৃতি ।
প্রশ্ন : রবীন্দ্রনাথের উপর প্রভাব উল্লেখ কর ।
উত্তর : ( ১ ) পারিবারিক সূত্রে পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন । ( ২ ) তাছাড়া উপনিষদ তাকে প্রভাবিত করে । ( ৩ ) রবীন্দ্রনাথের উপর তার পূর্বসূরী রাজা রামমােহন রায় ও স্বামী বিবেকানন্দের প্রভাব পড়েছে । ( ৪ ) বুদ্ধদেবের জীবনদর্শন তাকে প্রভাবিত করে । ( ৫ ) কবীরের প্রভাব । ( ৬ ) মধ্যযুগের ভারতীয় সন্ন্যাসীদের প্রভাব । ( ৭ ) সমন্বয়ী সভ্যতা সংস্কৃতির আদর্শ ও পশ্চিমী মানবতাবাদের প্রভাব ।