রুশাের ব্যাখ্যায় মানব সমাজে কীভাবে অসাম্য শুরু হল সংক্ষেপে লেখো ।

অনাস পাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান honours pass general political science রুশাের ব্যাখ্যায় মানব সমাজে কীভাবে অসাম্য শুরু হল সংক্ষেপে লেখো rushor bakkhai manob somaje kivabe asammo shuru holo songkhepe lekho questions answers



উত্তর । পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রতত্ত্বে রাষ্ট্রের উদ্ভব, গঠন , কার্যাবলী আদর্শ রাষ্ট্র, জনগণ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয়ক আলােচকদের মধ্যে জাঁ জাক রুশাে অন্যতম । মানবজাতির ইতিহাসে পুঁজিবাদের উদ্ভব মানব জীবনের জীবনযাত্রা , নতুন বিশ্ববােধ , সামন্ততান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানাদি ও শৃঙ্খলার পীড়ন থেকে মানুষকে মুক্ত করার প্রয়ােজনীয়তা সামনে রেখে রাষ্ট্রতত্ত্ব বিশ্লেষণে রুশাের মতামত নতুন পথের দিশারী । ফ্রান্সের গণতান্ত্রিক মহলের সামাজিক চেতনায় ১৮ শতকে রুশাের রাজনৈতিক মতবাদ বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে । 


যােড়শ শতকে শেষ থেকে সতেরাে শতকের শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র তত্ত্বের জগতে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল রাষ্ট্র সম্পর্কে যান্ত্রিক মতবাদ । তবে পরে তা গ্রহণযােগ্যতা হারাতে শুরু করে । ফ্রান্স, জার্মানীর প্রভৃতি দেশে রাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন নতুন মতবাদ দেখা যায় । ফ্রান্সের রুশাের রাষ্ট্রীয় মতবাদ রাষ্ট্রকে জীবদেহ হিসেবে তুলনা করে আলােচনা করছেন । ইউরােপীয় জ্ঞানদীপ্তির মৌলিক বহিঃপ্রকাশ যুক্তি । এই যুক্তিসহ মানবমনের আবেগ দ্বারাও রুশাে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তায় প্রভাবিত হয়েছিলেন । রুশাের চিন্তাধারায় নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন অধিকরূপে দেখা যায় । রাষ্ট্র ও সমাজ বিষয়ক নানান চিন্তা তার যে সকল লেখনীতে প্রকাশ পায় তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল ‘ Discourse on the Moral Effects of Arts and Sciences ’ ‘Discourses of Inequality ’, 'Social Contract’ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য । রুশাের রাষ্ট্র সম্পর্কিত ব্যাখ্যার শুরুতে মানুষকে প্রকৃতির রাজ্যে রাষ্ট্রহীন স্বাভাবিক প্রাকৃতিক অবস্থায় বসবাসকারী প্রাণী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন । রুশাের মতে প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ সরল , নিরীহ । ন্যায়পরায়ণতা বা দুর্নীতিপরায়ণতা কোন বিষয়েই তাদের জানা ছিল না । একটা নিস্পাপ , নিষ্কলুষ মনুষ্য সমাজে মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা ও সাম্যভােগ করত । কয়েকটি প্রাথমিক চাহিদা পূরণে চলমান সমাজে নিয়মকানুনের বন্ধন ছিল না। স্বাধীন, সমান , সুখী , সস্তুষ্ট ও আত্মতৃপ্ত সমাজ ছিল প্রকৃতির রাজ্যে । তার ব্যাখ্যায় স্বাভাবিক অবস্থায় একমাত্র সহজ প্রবৃত্তিতেই থাকত সব যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজন হত । এই পর্বে মানুষ দ্বারা মানুষের নিপীড়ন সম্ভব নয় । রুশাের মতে , স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ যতদিন লিপ্ত থেকেছে এমন শ্রমে যা একজন লােকের সাধ্যায়ত্ত এবং কেবল এমন বৃত্তিতে যাতে বহু হস্তের প্রয়ােজন নাই , ততদিন তারা অবাধে , তেমন স্বাস্থ্যে,সদয়তায় , সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পেরেছে যতটা প্রকৃতিগত ভাবে তাদের পক্ষে সম্ভব এবং নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে তারা স্বাধীনতা লঙ্ঘন না করে আদান প্রদানের আনন্দ উপভােগ করে গেছে । 



রুশাে ব্যাখ্যায় স্বাভাবিক অবস্থা থেকে নির্গমন সূচিত হয়েছে যখন থেকে দৈহিক অথবা স্বাভাবিক অসাম্যের সাথে সাথে নতুন ধরনের অসাম্য দেখা দিয়ে যা শর্তাধীন বা রাজনৈতিক অসাম্য । তার মতে অসাম্য উদ্ভবের প্রথম পর্যায় হল সম্পত্তির উদয় । রুশাে লিখছেন প্রথম যখন কোন একজন মানুষ এক চিলতে জমিতে বেড়া দিয়ে ঘােষণা করল  ‘এটা আমার ’ — সেটা বিশ্বাস করার মতাে যথেষ্ট সহজ সরল লােকও পেল সেই -নাগরিক সমাজের সত্যকার প্রতিষ্ঠাতা । সম্পত্তির আর্বিভাবে লােকদের জীবনে গভীর পরিবর্তন ঘটে , বেড়ে ওঠে স্বাভাবিক অসাম্যের গুরুত্ব, দেখা দিল নতুন ধরনের অসাম্য - ধনী দরিদ্রের প্রভেদ । রুশাে বর্ণিত স্বাভাবিক অবস্থায় স্বর্গীয়, আনন্দময় সুখ ও শান্তি লঙ্ঘিত হল । কারণ সভ্যতা প্রসূত ব্যক্তিগত সম্পত্তির লােভ ও লালসার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল । প্রয়ােজনের দাবি ও তা পূরণের সামর্থ্যের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখা দিল ।


 সভ্যতার বিকাশে বৈষম্য উদ্ভব মানব সমাজে পরিবর্তন আনল । বড়লােক প্রয়ােজন হল গরিবের পরিষেবা আবার গরিবের প্রয়ােজন হল বড়লােকদের আর্থিক সাহায্য । কিছু মানুষ সম্পত্তির অধিকারী হওয়ায় তাদের মধ্যে জেগে উঠল অহংবােধ । এই অহংবােধ আরও সম্পত্তি অধিগ্রহণের মানসিকতায় উৎসাহ  দিত । ফলে সম্পত্তিবানরা সম্পত্তি অধিগ্রহণে হিংসার পথ গ্রহণে দ্বিধা করল না । রুশাে আরাে লিখছেন , এই পরিস্থিতিতে ধনীরা প্রয়ােজনের চাপে একটা পরিকল্পনা তৈরি করল যা মানব মস্তিষ্কে কদাচ উচিত সমস্ত পরিকল্পনার মধ্যে অতি সুচিন্তিত — যারা তাদের আক্রমণ করছে তাদের শক্তিগুলিকে নিজের কাজে লাগানো , নিজের প্রতিপক্ষকে নিজের রক্ষকে পরিণত করা । বৈষম্যের ফলে সমাজ ও আইনগুলি দুর্বলের নতুন শেকল পরাল আর ধনীদের আরাে নতুন শক্তি দিল । বৈষম্য মূলক সমাজে উচ্ছেদ ঘটে স্বাভাবিক মুক্তির, প্রতিষ্ঠিত হয় মালিকানা ও অসাম্যের আইন , চতুর জবরদখলকে পরিণত করে অলঙ্নীয় অধিকারে এবং সেই থেকেই কিছু স্বার্থপরদের লাভের জন্য সমস্ত মানববংশকে নিপাতিত করেছে মেহনত , দাসত্ব আর দারিদ্রে।
 

সর্বোপরি বলা যায়, রুশাে সভ্যতার ধারাবাহিকতায় উদীয়মান বুর্জোয়া সমাজের উদ্ভুত সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈষম্য মূলক সভ্যতা সৃষ্টি, চরিত্র ও অবস্থা ব্যাখ্যা করেন । এমনকি বৈষম্যমূলক আচরণের নৈতিক বিলুপ্তির ব্যাখ্যাও দেন যা পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচর্চায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন