উত্তর : মধ্যযুগীয় সময়সীমা বলতে ৭১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কালকে ধরা হয় । যখন ভারতের একটি বড় অংশ মুসলিমদের শাসনাধীন ছিল । এই মুসলিম শাসকার ছিলেন বিদেশী দ্বারা ক্রমে এদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করেন ও এক নতুন ধারা প্রবতিত হয়। তারা এক সুসংহত রাষ্ট্রকাঠামাে গড়ে তুলে সুবিন্যস্ত প্রসাসন ব্যবস্থা পরিচালিত করে যা অসামান্য অবদানের অধিকারী ।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হল মধ্যযুগীয় ভারতের মুসলিম রাষ্ট্র ধর্মীয় রাষ্ট্র কিনা ? এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভিন্ন ভিন্ন মত পােষণ করেন । সেগুলি নিম্নে আলােচনা করা হল
১ ) মধ্যযুগীয় ভারতের সুলতানী রাষ্ট্রকে ইসলামি ধর্মাশ্রিত রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয় কারণ দিল্লির সুলতানগণ মুসলিম পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরন ও শরিয়ত মেনে তাদের প্রশাসন পরিচালনা করতেন ।
২ ) সুলতানী রাষ্ট্রে শরিয়ত ব্যাখ্যাদানকারী উলেমাগণই ছিলেন অসাম্যপ্রশাসনিক ভূমিকার অধিকারী । উলেমাগণ ছিলেন ধর্মপ্রাণ ও রক্ষণশীল । তাই মধ্যযুগীয় ইসলামীয় শাসনকে ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা হয় ।
৩ ) এই সময় অনেক সুলতানই অমুসলিমদের জোর করে বা প্রভাবিত করে জনগণ বা প্রজাদের ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত করতেন ।
৪ ) মধ্যযুগীয় শাসনব্যবস্থায় অমুসলিমদের কাছ থেকে নানা ধরনের কর আদায় করা হতাে । যেমন — জিজিয়া কর ।
৫ ) ভারতবর্ষের মুসলিম রাষ্ট্রকে ধর্মাশ্রিত খলিফাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করা যায় । হজরত মহম্মদ -এর মৃত্যুর পর খলিফাতন্ত্রের প্রভাব সুলতানী প্রসাসনে লক্ষ্য করা যায় ।
উপরিউক্ত আলােচনা থেকে দেখতে পাওয়া যায় মধ্যযুগীয় ভারতের মুসলিম রাষ্ট্রের উপর ধর্মের প্রভাব অত্যধিক উপস্থিতি ছিল । কিন্তু ড . কুরেশী , ড. মহম্মদ হাবিব , সতীশচন্দ্র প্রভৃতি ঐতিহাসিকরা সুলতানী রাষ্ট্রকে ধর্মভিত্তিক না বলে ধর্মনিরপেক্ষ বলেছেন । তারা মনে করতেন মুসলিম শাসকরা সর্বদা ইসলাম বিধানের ধার ধারত না , তাদের শাসনক্ষমতা অক্ষত রাখার উদ্দেশ্যে শরিয়ত আইন মানতেন না , আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক মুসলিম রাষ্ট্রে অনেক হিন্দু কর্মচারীও নিযুক্ত ছিলেন ।
উপরিউক্ত বিতর্কের শর্তেও একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র/ছাত্রী হিসাবে মনে করি যে মধ্যযুগীয় ভারতের সুলতানী রাষ্ট্র যথার্থ অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই ধর্মীয় ছিল ।