কৌটিল্যের দণ্ডনীতি ব্যাখ্যা করো ।

অনাস পাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান honours pass general political science কৌটিল্যের দণ্ডনীতি ব্যাখ্যা করো koutiller dondoniti bakkha koro questions answers


উত্তর : মহাভারতের রাজনীতির একটি পর্যায় হল দণ্ডনীতি । সেই সময় রাজধর্মের একটি অঙ্গ হিসাবে দণ্ডনীতিকে গণ্য করা হতাে । দণ্ডশব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে শাস্তিপ্রদানের নিয়মাবলী । রাষ্ট্রই একমাত্র শাস্তি প্রদানের অধিকারী ছিল । যেহেতু প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্র ও শাসককে এক মনে করা হতাে । তাই রাজা একমাত্র দৃঢ়ভাবে দণ্ডদানের অধিকারী । মহাভারতে শান্তিপর্বে দণ্ডনীতির উদ্ভব সম্পর্কে একটি কাহিনির উল্লেখ আছে । 

       রাষ্ট্রনীতির পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত চিন্তা রাজনীতিবিদ কৌটিল্যের দণ্ডবিষয়ক নীতি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ তিনি দণ্ডনীতি বলতে রাষ্ট্রের শাসন পরিচালনার নীতিকেই চিহ্নিত করেছেন । তিনি মনে করতেন দণ্ডনীতি প্রশাসন নীতির মূল কথাই হল দণ্ডবিধানের ব্যাবস্থাপনা । সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে তা না হলে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেবে ও রাষ্ট্র সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবে না ।
       
        সাধারণভাবে সাম , দান ও ভেদ এই তিন প্রকার উপায়ের প্রয়ােগ পদ্ধতি হিসাবে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক পরিচালিত হয়। তাদের ব্যর্থতায় দণ্ড বা বলপ্রয়ােগের প্রয়ােজন অবশ্যম্ভাবী । কৌটিল্যের মতে প্রকাশ যুদ্ধ, কূটযুদ্ধে দণ্ডরূপ উপায়ের ব্যবহার করা হয় । তিনি তার অর্থশাস্ত্রে বলেছেন প্রশাসন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে ও প্রজাকে বশে রাখতে এই নীতি রাজাকে সাহায্য করে । এই নীতি যেমন একদিকে প্রজাদের রক্ষা করে ও তেমন অন্যদিকে রাষ্ট্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখে সকলে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে দণ্ড তখন জাগ্রত থাকে ।
        
         কৌটিল্যের দণ্ডনীতি ধারণায় রয়েছে সামাজিক রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক , ধর্মীয় বিষয়গুলির মধ্যে শৃঙ্খলা ও সংহতি সাধন বজায় রাখার জন্য বিবিধ নিয়মকানুন । কৌটিল্য দণ্ডনীতি বলতে যে তিনটি বিষয়কে বুঝিয়েছেন সেগুলি হল— 
         ক ) দণ্ডদানের নিয়মসমূহ । 
         খ ) রাজ্যশাসনের নিয়মাবলী । 
         গ ) দণ্ডাধিকারী রাজাকে পরিচালিত করার নিয়মাবলী । 
         
        এইসব নীতিসমূহ ছিল রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ হাতিয়ার । কৌটিল্য মনে করতেন দণ্ড নীতির সাহায়্যে আন্থীশিকী , ত্রয়ী ও শর্তা — এই তিন বিদ্যার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয় । এই তিন বিদ্যার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে মানুষের জীবন সুন্দর , সুষ্ঠ , সমৃদ্ধ করা যায় । দণ্ড নীতির উপস্থিতি না থাকলে অন্য সকল বিদ্যা বিফল হতে পারে কারণ এই নীতির মধ্যে দিয়েই অলব্ধ বস্তুকে লাভ করা যায় ও লব্ধ বস্তুকে সুরক্ষিত করা যায় ।
        
         কৌটিল্যের মতে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দণ্ড একান্ত প্রয়ােজনীয় উপাদান , যা রাজা প্রয়ােগ করতে পারেন অপরাধজনক কাজের জন্য কঠোর শাস্তি দানের মধ্য দিয়ে । তাহলে জনগণ দণ্ডের ভয়ে অন্যায়কাজ থেকে বিরত থাকবে তবে তিনি মনে করতেন দণ্ডাধিকারী রাজা যেন কোনাে অপরাধের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পরিমাণে শাস্তি না দেন , তাহলে প্রজাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হবে ও জনগণ রাজার প্রতি শ্রদ্ধা হারাবে । পাশাপাশি তিনি বলেন শাস্তি কখনােই অপরাধের তুলনায় কম হবে না তাহলে প্রজারা প্রশ্রয় পাবে ও অন্যায় , অপরাধের মাত্রা ক্রমে বৃদ্ধি পাবে । তাই রাজাকে সুযােগ্য দণ্ড দান করতে হবে । অর্থাৎ অপরাধের যথােপযুক্ত শাস্তিই কাম্য বলে কৌটিল্য মনে করতেন । 
         
        দণ্ডনীতির অপর এক উদ্দেশ্য ছিল সর্বত্র স্বধর্মী প্রতিষ্ঠা করা । রাজার কর্তব্য হবে সকল প্রজাগণ যাতে তাদের স্বধর্ম থেকে বিচ্যুত না হয় তা দেখা , এই কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে সর্বপ্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ রাজার অধিকারে আসে ও রাজ্য ক্ষুদ্র হলেও রাজা , প্রজা উভয়ে সুখী হয়। 
        

        মূল্যায়ণ : উপরিউক্ত আলােচনা থেকে আমরা দেখতে পাই যে দণ্ডনীতির সঠিক প্রয়ােগের মধ্য দিয়ে রাজা যথার্থভাবে তার রাজকার্য পরিচালনা করেন । দণ্ডনীতির সঠিক প্রয়ােগের মধ্য দিয়ে যেমন সুখ সুনিশ্চিত হয় তেমনি এই নীতির অপপ্রয়ােগ হলে রাষ্ট্রের মধ্যে প্রজাদের অসন্তোষ বৃদ্ধি পায় ও ভারসাম্য নষ্ট হয় । অর্থাৎ দণ্ড নীতির মাধ্যমে সামাজিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রেই সঠিক প্রয়ােগের মধ্য দিয়ে শাসক অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করে সুশাসন সংরক্ষণ করবেন — যা বর্তমানেও সমানভাবে লক্ষণীয় 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন