রাষ্ট্রও সমাজের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ কোনটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং কেন — ব্যাখ্যা কর । রবীন্দ্রনা ঠাকুর কোন কোন প্রবন্ধে এই ধারণা ব্যক্তি করেন ?

অনাস পাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান honours pass general political science রাষ্ট্রও সমাজের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ কোনটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং কেন ব্যাখ্যা কর রবীন্দ্রনা ঠাকুর কোন কোন প্রবন্ধে এই ধারণা ব্যক্তি করেন rastro o somajer modhe robindronath kontike odhik gurutto diyechilen abong ken bakkha koro robindronath thakur kon kon probondhe ai dharona bakti


উত্তর : সাহিত্য , সমাজ ,রাষ্ট্রভাবনা সবক্ষেত্রেই রবীন্দ্রনাথে অবাধ বিচরণ । তাই তার দৃষ্টি থেকে ভারত ও বিশ্বের রাষ্ট্র ও সমাজের ভাবনা এড়িয়ে যায়নি । তার বিচারে  রাষ্ট্র অপেক্ষা সমাজ ভাবনাটি অধিকর আপনার । কারণ , তিনি মনে করতেন  সমাজের উন্নতির মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রভাবনায় পৌছানাে সম্ভব । 
 
         রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাষ্ট্র ও সমাজ বিষয়ে তার ধারণা বিভিন্ন প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন । তার বক্তব্য সমাজ ‘ স্বদেশী সমাজ ’ ‘ ভারতীবর্ষীয় সমাজ ’ ও  ‘ কালান্তর ’ প্রবন্ধে ফুটিয়ে তুলেছেন । 
         


রাষ্ট্র ও সমাজের গুরুত্ব এবং রবীন্দ্রনাথ :

 রবীন্দ্রনাথের কাছে রাষ্ট্র অপেক্ষা সমাজের গুরুত্ব বেশি ছিল কারণ— 
 
ক ) মানুষের সমষ্টিগত যাবতীয় চাহিদার পরিপূরর্ণে এবং মানুষের সমষ্টিগত চেতনার বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের চেয়ে সমাজের গুরুত্বই অধিক । 

খ ) মানবিক সম্পর্কসমূহের এক স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা হলাে বৃহত্তর সমাজ , রাষ্ট্র নয় । 

গ ) সমাজ প্রাণবন্ত ও আত্মশক্তিসম্পন্ন এবং তার আত্মশক্তি অবিনশ্বর , কিন্তু রাষ্ট্র তা নয় । 


ঘ ) রাষ্ট্রের পরিবর্তে সমাজদেহের মধ্যে দিয়েই ব্যক্তির সত্তা বিচ্ছুরিত হয় , ব্যক্তি মানুষের সমস্যা আত্মােপলব্ধি ঘটে , ব্যক্তি মানুষের আমিত্ব সর্বস্ব চিন্তা দূরীভূত হয় এবং সে সমাজের সহায়তায় পরিপুতার দিয়ে এগিয়ে যায় । 


রাষ্ট্র ও সমাজ সম্পর্ক বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বক্তব্য : রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্র চিন্তায় সমাজশক্তিই অধিক প্রাধান্য পেয়েছে । এ বিষয়ে বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ধারণাগত সাদৃশ্য রয়েছে । রাজনীতিকে তিনি রাষ্ট্রসর্বস্ব করে তুলতে চাননি ।। রাষ্ট্রের ব্যাপারে তাঁর আগ্রহ ছিল না ,বরং ছিল অনাস্থা । তিনি বিভিন্ন ইউরােপীয় দেশ ঘুরলেও ইউরােপীয় রাজনীতিতে রাষ্ট্রের প্রভাব তাঁকে প্রভাবিত করতে পারেনি । 


প্রথমত , তিনি সভ্যতার ও সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হিসাবে সমাজকেই গুরুত্ব দিয়েছেন , ইউরােপের মতাে রাষ্ট্রকে নয় । 

দ্বিতীয়ত , আমাদের দেশে একসময় রাজশক্তির আকারে ইংরেজি পরিভাষায় যাকে স্টেট বা সরকার বলে তা থাকলেও পুরােপুরি ইউরােপীয় আকারে ছিল না । তার ভাষায় : বিলাতের স্টেটের সঙ্গে আমাদের রাজশক্তির প্রভেদ আছে । বিলাত , দেশের সমস্ত কল্যাণকর্মের ভার স্টেটের হাতে সমর্পণ করিয়াছি — ভারতবর্ষ তাহা আংশিক মাত্র        করিয়াছিল ।

তৃতীয়ত , তার    ভাষায়  :  “ সাধারণের     কল্যাণভার যেখানে পুঞ্জিত হয়, সেখানেই
দেশের মর্মস্থান । সেইখানে আঘাত করিলেই সমস্ত  দেশ সাংঘাতিকরূপে আহত হয় । বিলাতে রাজশক্তি         যদি  বিপর্যস্ত হয় , তবে সমস্ত দেশের বিনাশ উপস্থিত    হয় । ...... আমাদের দেশে সমাজ যদি পঙ্কু হয় , তবেই  যথার্থভাবে দেশের সংকটাবস্থা  উপস্থিত
হয় । এইজন্য আমরা এতকাল রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার   জন্য প্রাণপণ করি নাই কিন্ত সামাজিক স্বাধীনতা       সর্বতােভাবে বাঁচাইয়া আসিয়াছি ।”

চতুর্থত , ‘ স্বদেশী সমাজ ’ প্রবন্ধে কবি রাষ্ট্র ও সমাজের কর্মক্ষেত্রের পার্থক্য করে বলেছেন —  দেশরক্ষা এবং বিচারকার্যের ভার থাকুক রাজার উপর । কিন্তু যে কাজগুলিকে আমরা ওয়েলফেয়ার  ফাংশান  বা জনকল্যাণমূলক কাজ বলে থাকি তার
 ভার সমাজের  উপর । 
 
পঞ্চমত , সমাজশক্তির প্রধান্যযুক্ত ভারতে সমাজ তথা সমাজতন্ত্র  প্রবল এবং সমাজের কর্মপরিধি রাষ্ট্রের মতাে সংকুচিত তাে নয়ই , বরং ব্যাপক  । তার   ভাষায়  : “ চিরদিন ভারতবর্ষে  এবং চীনদেশে  সমাজতন্ত্র  প্রবল , রাষ্ট্রতন্ত্র তার নীচে । দেশ যথার্থভাবে আত্মরক্ষা  করে এসেছে । সমাজের  সম্মিলিত  সন্ধিতে  । সমাজই বিদ্যার অবস্থা করেছে  , তৃষিতকে জল  দিয়েছ , ক্ষুধার্থকে অন্ন, পূজার্থীকে  মন্দির, অপরাধীকে দণ্ড , শ্রদ্ধেয়কে শ্রদ্ধা, গ্রামে গ্রামে দেশের চরিত্রকে রক্ষিত এবং তার  স্ত্রীকে প্রতিষ্ঠিত করেছে ।  ...এমনি দেশ ছিল দেশের লােকের   , রাজা ছিল তার এক অংশে  মাত্র, মাথার উপরে যেমন মুকুট তাকে তেমনি ।”


ষষ্ঠত , সমাজ  একটি  প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান, সেখানে    মানুষের বৃহত্তর ভালাে হতে পারে । এই  সমস্ত   মানুষের  নীতিবােধ  ও  সৌন্দর্যবােধের  জন্ম হয়;  মানুষের আত্মিক সর্বস্ব বােধ দূরীভূত হয় এবং   মানুষ এই সমাজে উপলব্ধি করে যে , সে ঐশী   শক্তির অংশ , মহৎ উদ্দেশ্যসাধনের জন্য এই পৃথিবীতে তার আগমন ঘটেছে ও সকলের
কল্যাণকর কাজে তার আত্মনিয়ােগ আবশ্যক ।  রাষ্ট্র নয় সমাজই  আমাদের দেশের উন্নয়নের  কাণ্ডারী ।


 রাষ্ট্র ও সমাজ বিষয়ে কতকগুলি বক্তব্য   :
১ ) রবীন্দ্রনাথ বেশ স্পষ্টভাবেই বলেছেন , যে , রাষ্ট্রও সমাজের সম্পর্ক গভীর নয় । কেননা  , সরকার যা আসলে রাষ্ট্রেরই বাহন তার   অস্তিত্ব সমাজের বাইরে , সে যেন একটি বিচ্ছিন্ন সংস্থা ।

২ ) রবীন্দ্রনাথ এও বলেছেন যে, রাষ্ট্রের সঙ্গে  সমাজের মূলগত সম্পর্ক খুবই ক্ষীণ ও  শিথিল ।  কারণ  ,  বৃহৎ সমাজের  জীবনযাত্রায় রাষ্ট্রের-অংশগ্রহণ মােটেই গুরুত্বপূর্ণ নয় , বরং     অকিঞ্ছিকর    ।    




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন