সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে রামমােহনের ভূমিকা আলােচনা করো ।

অনাস পাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান honours pass general political science সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারক হিসাবে রামমােহনের ভূমিকা আলােচনা করো samajik o dhormiyo songskarok hisabe rammohoner bhumika alochona koro questions answers


উত্তর : রামমােহন রায়কে ভারতীয় নবজাগরণের আদিপুরুষ আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে । আধুনিক ভারতের অন্যতম প্রবর চিন্তানায়ক , হিসাবে তিনি ধর্ম ও সমাজচিন্তার উপর অধিকর গুরুত্ব আরােপ করেছিলেন । তিনি যে সময়ে অবস্থান করতেন সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর এই বিশ্বাস জন্মেছিল যে রাজনৈতিক পরিবর্তনের থেকে এখন সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল সামাজিক পরিবর্তন । তিনি লক্ষ্য করেছিলেন অশিক্ষা , অজ্ঞতা ও ধর্মীয় কুসংস্কার সমাজকে এমনভাবে গ্রাস করেছে , যার দ্বারা ধর্মের স্থান দখল করেছে লােকাচার । এরূপ সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার সাধনই রামমােহনের প্রধান লক্ষ্য।যুক্তিহীন প্রচলিত ব্যবস্থাকে দূর করে যুক্তিবাদকে প্রতিষ্ঠা করাই তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল । তাই অতীত ঐতিহ্যকে অস্বীকার না করে আধুনিকতার স্বার্থে তাকে সংশােধন করতে চেয়েছিলেন । সর্বপ্রথম তিনি প্রচলিত হিন্দু ধর্মের ব্যবস্থাগুলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন । 


           সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে রামমােহন বুঝেছিলেন শুধুমাত্র বাহ্যিক, আকারগত বা আইনগত পরিবর্তন করে সমাজে পরিবর্তন সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়ােজন জনজাগরণ । তাই জনজাগরণ গড়ে তােলার জন্য জনচেতনা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন । সেই জন্যই রামমােহন সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার করতে চেয়েছিলেন । তাঁর বিশ্বাস ছিল একমাত্র শিক্ষিত জনসমাজ সামাজিক কুসংস্কার ও প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি করতে পারে । সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে রামমােহনের সৃষ্টি হয় সেই চেতনার পরিচালকের ভূমিকা পালন করে এই কথা তিনি বিশ্বাস করতেন । সমাজের কুসংস্কার ও কুপ্রথাগুলি দূর করার জন্য সমাজসংস্কারের বিষয়টি তাঁর কাছে প্রাধান্য লাভ করেছিল । সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে রামমােহন রায়ের সবথেকে বড় অবদান হল সতীদাহ প্রথা বন্ধ ,বিধবাবিবাহ প্রচলন । সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে মতবাদ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে  রামমাহনের চিন্তার মধ্যে নারীর স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন ।


           একদিকে হিন্দু ধর্মের কুসংস্কার গোঁড়ামিগুলির সংস্কারের মধ্যে দিয়ে তিনি সমাজের উন্নয়নের পথকে সুগম করে তুলতে চেয়েছিলেন । প্রকৃতপক্ষে রামমোহন পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়েছিলেন কারণ মূর্তিপূজায় বিশ্বাসী কুসংস্কার থেকে সমাজকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন । সেই কারণে বেদান্তকে নতুন ভারতের রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করার পক্ষপাতী ছিলেন । পৌত্তলিকতা প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণ্যবাদের বিষয়টি রামমােহন উল্লেখ করে বলেন যে , ‘ যার ভিত্তিতে আমি সকল বিবর্তকের উল্লেখ করেছি সেগুলি ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে নয়, তার বিকৃতির বিরুদ্ধে এবং আমি এটি দেখাতে সচেষ্ট যে ব্রাহ্মণদের বিষয়টি তাদের পূর্বপুরুষদের কার্যকলাপের পরিপন্থী ।
           
   
             সমাজসংস্কার ও ধর্মসংস্কার করার ক্ষেত্রে রামমােহনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সমাজের জাতিভেদ প্রথার বিরােধিতা করা । রামমােহন মনে করতেন জাতিভেদ প্রথা সামাজিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে । জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে কথা বললেও তিনি সরাসরি এই প্রথার বিরুদ্ধে কোনােরূপ আন্দোলন সংগঠিত করেননি ।
             

        সর্বোপরি বলা যায় রামমােহন ভারতীয়দের রাজনৈতিক সুবিধা ও সামাজিক স্বাচ্ছেন্দের প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজসংস্কারক ও ধর্মীয় সংস্কার করতে ব্ৰতী হয়েছিলেন । তিনি নিজে অধ্যাত্মবাদী হওয়া সত্ত্বেও ধর্মকে তিনি জনকল্যাণের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করেছিলেন । ধর্মের যে দিকগুলি মানুষের সামাজিক স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্যের পথে বাধা সৃষ্টি করেছিল সেই দিকগুলিকে তিনি খর্ব করতে চেয়েছিলেন । তাইতাে বিপিনচন্দ্র পাল বলেছেন— “মধ্যযুগীয় বস্তু নিরপেক্ষতার মারাত্মক দুঃস্বপ্ন থেকে ” হিন্দু সমাজকে তিনি মুক্তিদিয়েছেন । রামমােহন ধর্মপালনকে শাস্ত্রনির্ভরতার পরিবর্তে যুক্তিমুখী করে তােলার পক্ষে বিশেষ জোর দিয়েছিলেন । কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও যুক্তিহীন জাতীয় জীবনকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে রামমােহনের অবদান ছিল অপরিসীম । 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন