প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চার পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো ।

অনাস পাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান honours pass general political science  প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চার পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো pracho o paschattyo rastrochorchar parthokkoguli ullekh koro questions answers


উত্তর । বুদ্ধিবৃত্তির ক্রামােন্নয়নে বাস্তবতার অভিজ্ঞতায় নিঃসঙ্গ ব্যক্তি মানুষ গড়ে তুলেছিল গােষ্ঠীও সমাজ । সমাজ বিবর্তনের পথে রাষ্ট্রের উদ্ভবও মানুষের নিজস্ব প্রয়ােজন পুরনে । প্রাচীন সময় থেকেই মানবসভ্যতার ভিন্নতা চিন্তার জগতে অনেকটা ভিন্নতা তৈরি করে যদি সকল ক্ষেত্রে সভ্যতার মৌলিকত্ব ছিল মনুষ্যসমাজের সূক্ষ, সুস্থ জীবন যাপনের পথে এগিয়ে যাওয়া এবং ক্ৰমন্নোয়নের লক্ষ্যে অগ্রসর হওয়া । এভাবে চিন্তা ও চর্চার ভিন্নতা রাষ্ট্রতত্ত্ব সম্পর্কে চিন্তাচর্চার ভিন্নতার উন্মেষ ঘটায় । এক্ষেত্রে প্রাচ্যমূলত ভারতীয় রাষ্ট্রচর্চা ও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চা মূলত গ্রীস রাষ্ট্রচর্চার দ্বারা অধিকতর প্রভাবিত । 


প্রাচ্য রাষ্ট্রচর্চার ক্ষেত্রে আমরা ম্যাক্সমুলার, রমেশচন্দ্র দত্ত, রােমিলা থাপার প্রমুখের নাম করতে পারি যাঁরা প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রব্যবস্থা,আইন , শাসন , বিচার ব্যবস্থা নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ক আলােচনা করেছে বেদ , উপনিষদ , পুরান , মহাকাব্য , অর্থশাস্ত্র প্রভৃতির উপর ভিত্তি করে । পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চায় আমরা সক্রেটিস , প্লেটো , অ্যারিস্টটল , পােটায়ােরাস , জর্জিয়াস প্রমুখের নাম করতে পারি যাঁরা প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা সমকালীন নগররাষ্ট্র ব্যবস্থা , আইন , শাসন , বিচারব্যবস্থা , নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় শক্তির সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ক আলােচনা করেছেন ।


 উভয় রাষ্ট্রচর্চাই জনগনের সুষ্ট শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাত্রা প্রদান জনকল্যান আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা , আইন ব্যবস্থা ও শাসন ব্যবস্থা গঠনের কথা বলে । উদ্দেশ্যগত কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হলেও তা অর্জনের পদ্ধতিগত পার্থক্য ও দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় । 
 
         প্রথমত , পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রচর্চা সংশ্লিষ্ট বিষয়ক অধিকমাত্রায় চর্চা করে এবং তা ছিল সুসংবদ্ধ ও ধারাবাহিক । 
         তথাপি প্রাচ্য রাষ্ট্রচর্চা বিশেষতম ভারতীয় রাষ্ট্রচর্চায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ক ব্যাখ্যার অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি তৎসহ প্রাচ্যের রাষ্ট্রচর্চা সুসংবদ্ধভাবে বিশ্লেষিত হয়নি । 
         
         দ্বিতীয়ত , পাশ্চাত্যের বিশেষত গ্রীকদের রাষ্ট্রচর্চা ধর্মীয় প্রেরণা বিশেষ ভূমিকা পালন করেনি ।
          অন্যদিকে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচর্চা ধর্মীয় দর্শন ও বিধিব্যবস্থা দ্বারা অধিকতর প্রভাবিত হয় । 
          
          তৃতীয়ত , প্রাচীন গ্রীসে নাগরিকদের যােগ্যতা অনুযায়ী গুরুত্ব বিবেচিত হওয়ার প্রতি অধিক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় । 
          পক্ষান্তরে প্রাচ্যের রাষ্ট্রচর্চায় মানুষের জন্ম বংশ , জাতপাত ,বর্ণ প্রভৃতির গুলি যােগ্যতা নির্ধারণের মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রতি অধিকতর আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় । 
          
          চতুর্থত , গ্রীক রাষ্ট্রচর্চায় মানুষকেই আলােচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় । অন্যদিকে প্রাচ্য রাষ্ট্রচর্চায় তুলনামূলক ভাবে দেবদেবীকে আলােচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস অধিকতর পরিলক্ষিত হয় । 
          
          পঞ্চমত , পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চায় সংলাপধর্মী বাগবিদ্যার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় । যা প্রাচ্যের রাষ্ট্রচর্চায় তুলনামূলক ভাবে ছিল কম । 
          
          ষষ্টত , প্রাচ্য বিশেষত ভারতীয় রাষ্ট্রচর্চা বিষয়ক কিছু নঞর্থক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় যা মূলত ঔপনিবেশিক মনােভাব থেকে উদ্ভূত । 
          


অন্যদিকে পাশ্চাত্য বিশেষ গ্রীক রাষ্ট্রতত্ত্ব চর্চায় উপনিবেশিক মনােভাবের উদ্ভুত স্বরূপ ব্যাখ্যা অনুপস্থিত । সবশেষে বলা যায় , প্রাচীন পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রতত্ত্বে রাষ্ট্র ও পুরসমাজের সম্পর্ক বিষয়ে পরস্পর বিরােধী তত্ত্ব প্রচারিত হয় । উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যমূলক সম্পর্ক থাকা প্রয়ােজন বলে ব্যাখ্যা হয় যদি ভারতীয় চর্চায় সমাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল । এক্ষেত্রে ব্যক্তির নৈতিক দায়বদ্ধতায় সমাজ ও রাষ্ট্রকে বহন করার উপর গুরুত্ব আরােপিত হয় । সর্বোপরি একথা অনস্বীকার্য সে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চা সময়ের প্রয়ােজনে ব্যাখ্যা হওয়া নিজ নিজ আর্থসামাজিক সংস্কৃতিক পরিস্থিতি নির্ভর ও ব্যাখ্যাকারদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শি চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ । অর্থাৎ রাষ্ট্রতত্ত্বগুলি কালানুক্রমিকতার সাথে সাথে ভৌগােলিকতাতেও নির্ভরশীল



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন