নাগরিকতা সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা ব্যাখ্যা করো ।

অনাস পাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান honours pass general political science নাগরিকতা সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা ব্যাখ্যা করো nagorikota somporke aristotler dharona bakkha koro questions answers


উত্তর । পাশ্চাত্য রাষ্ট্রচর্চায় বিশেষত প্রাচীন গ্রীক দর্শনে দিকপাল প্রাচীন মনস্বী হলেন অ্যারিস্টটল । বিজ্ঞান হিসেবে রাজনীতি তার নিকট নৈতিকতার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত । অ্যারিস্টটল বাস্তব রাজনৈতিক সম্পর্কের অভ্যন্তরীণ যুক্তিপরম্পরা ও সত্যকার অর্থ ব্যাখ্যায় গুরুত্ব আরােপ করেন ।


প্রসঙ্গত দাসব্যবস্থা ভিত্তিক গ্রীক সমাজের নগররাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতির নিরেক্ষে অ্যারিস্টটলের বিভিন্ন বিষয়ক বক্তব্য তুলে ধরা অবশ্যম্ভাবী। নগররাষ্ট্রকেন্দ্রিক গ্রীসের এথেন্স , স্পার্টা,আক্রাগাস প্রভৃতি নগরগুলি যা বর্তমান শহর বা নগর এর আকৃতি প্রকৃতি থেকে ভিন্ন তবে প্রাচীন গ্রীসে নগর রাষ্ট্র বলতে উল্লিখিত গুলিই বােঝাত । এগুলি পােলিস নামে পরিচিত ছিল । বর্তমানের মত জটিল হলেও প্রাচীন গ্রীসের সামাজিক স্তর বিন্যাস ছিল । যা দাসব্যবস্থা ভিত্তিক সামাজিক স্তর বিন্যাস এবং অনেকটাই অনমনীয় ও অমানবিক সর্বোপরি অগনতান্ত্রিক । 


অ্যারিস্টটল তার ‘The Politics ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কে বুঝতে হলে নাগরিকতার প্রকৃতি বুঝতে হবে । কারন রাষ্ট্র একটি নাগরিকমন্ডলী । তার মতে নাগরিকতা বসবাস বা ব্যক্তিগত আইনের অধীন অধিকার দ্বারা নির্ধারিত হয় না, সরকারী আইনের অধীন সাংবাদিক অধিকার দ্বারা নির্ধারিত হয় না । “ যে বিচার বিভাগের কার্যে এবং সরকারী পদে স্থায়ী ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে সেই নাগরিক । তার মতে কোন স্থানে বসবাস করলেই প্রকৃত নাগরিক হওয়া যায় না । বাসিন্দা বিদেশীরা এবং ক্রীতদাসরা একস্থানে বসবাস করে কিন্তু তারা নাগরিক নয় । তিনি আরাে বলেন , আদালতে অভিযােগ করা এবং অভিযুক্ত হওয়া — এই পৌর অধিকার ভােগ করলেই নাগরিক নয় । অ্যারিস্টটলের মতে , যে বিতর্ক বা বিচার বিভাগীয় পদে অংশগ্রহণের অধিকার ভােগ করে (যে কোন সময়ের জন্য নির্ধারিত বা অনির্ধারিত ) সেই তার রাষ্ট্রের নাগরিকের মর্যাদা অর্জন করে । রাষ্ট্র এইরূপ ব্যক্তিদের সংগঠন যারা সংখ্যায় হবে স্বয়ং সম্পূর্ণ জীবন যাপনের যােগ্য । তিনি বলেন সংবিধানের পরিবর্তনের পরেও যারা বিচার ও বিতর্ক বিভাগীয় পদে আসীন থাকবে তারা কার্যত নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে । রাষ্ট্র উৎকৃষ্টতম হতে তিনি সুনাগরিকের কথা উল্লেখ করেন । নাগরিকের গুনবত্তা হবে সংবিধান সাপেক্ষ । 

অ্যারিস্টটল রাষ্ট্রের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন ব্যাক্তি বা পরিবার নয় রাষ্ট্র আকারের দিক থেকে নাগরিকদের সুনির্দিষ্ট একথা সমূহতা । তার মতে , সেই নাগরিক যে নির্দিষ্ট রাষ্ট্রটির বিধান উপদেশক ও বিচার ক্ষমতায় অংশ নিতে পারে । সকল ধরনের রাষ্ট্রই নাগরিক বলতে সেখানে যা বােঝায় তার অনুরূপ নাগরিক অধিকার সমূহে ভূষিত জনমন্ডলীকে বাছাই করার ভিত্তির অনুরূপ । নগররাষ্ট্রে দাসব্যবস্থাই ছিল অন্যতম ভিত্তি। তাঁর মতে কোন দাসের পরিণত ও স্বাধীন ব্যক্তিসুলভ প্রকৃতির বিকাশ ঘটলে তাকে মুক্ত করে স্বাধীন জীবনের অধিকার দেওয়া যেতে পারে । নাগরিকদের বৌদ্ধিক ও নৈতিক মান উন্নয়ন তার নিকট ছিল জরুরী । 

অ্যারিস্টটলের মতে , নাগরিকতার ভিন্ন ভিন্ন ভিত্তি হচ্ছে সংবিধান । সংবিধানগুলির মধ্যে গুনগত পার্থক্য থাকায় ভিন্ন ভিন্ন সংবিধানের অধীন নাগরিকও ভিন্ন ভিন্ন হবে । 

অ্যারিস্টটলের ব্যাখ্যায় ব্যবহারিক জীবনে নাগরিক বলতে পিতামাতার সন্তান আবার তিনি দূর পশ্চাত বংশের দ্বিতীয়,তৃতীয় আরাে অধিক পর্যায় পর্যন্ত টেনে নিয়েও নাগরিকত্বের আলােচনা করেছেন । তবে যারা কোন রাষ্ট্রের প্রথম নিবাসী বা প্রতিষ্ঠাতা তাদের ক্ষেত্রে নাগরিক পিতামাতার সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না ।


অ্যারিস্টটল আদর্শ সংবিধানের জন্য সুনাগরিকের প্রয়ােজন । সুনাগরিক নৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী হবে । তার মতে সুনাগরিকের মধ্যে শাসন করার ও শাসিত হওয়ার উপযুক্ত জ্ঞান ও যােগ্যতা থাকবে ।স্বাধীন মানুষের উপর শাসন পরিচালনা করার জ্ঞান হিসাবেই নাগরিকের গুনবত্তাকে নিরুক্ত করা যেতে পারে । এছাড়াও সুনাগরিকের থাকবে উপযুক্ত সংযম ও ন্যায়শীলতা স্বকীয় বিশেষ গুন । তিনি আরাে বলেন যারা রাষ্ট্রের জীবনের অপরিহার্য অংশ তাদের সকলকে নাগরিক শ্রেণীভুক্ত করা যায় না । তেমনি যে অর্থে বয়স্করা নাগরিক সেই অর্থে শিশুরা নাগরিক নয় । বয়স্করা সম্পূর্ণ নাগরিক কিন্তু শিশুরা সীমিত অর্থে নাগরিক কারন তারা অপরিণত ।


 অ্যারিস্টটল আরাে বলেন জনসংখ্যার হ্রাস বৃত্তি উপর নির্ভর করে নাগরিকতার যথাক্রমে প্রসার হ্রাস নীতির আইন সৃষ্টি হয় । 
 

সর্বোপরি বলা যায় একাধিক নগর রাষ্ট্রের তুলনামূলক আলােচনার মাধ্যমে প্রাচীন গ্রীসে বিভিন্ন সংকটাপন্ন নগর রাষ্ট্রের উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে প্রয়ােজনীয় নাগরিকের গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা অ্যারিস্টটল ব্যাখ্যা করেন । যার বেশ কিছু ধারণা আজও আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে বা রাষ্ট্রের প্রতি জনগনের কর্তব্য পালনে একান্ত প্রয়ােজন ।  


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন