ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো ।

অনাস পাস রাষ্ট্রবিজ্ঞান honours pass general political science ভারতীয় রাষ্ট্রচিন্তার বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো bharotiyo rastrochintar boishistoguli ullekh koro



উত্তর । প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যের অবদান দার্শনিক চিন্তাবিদরা মানব জীবনের সকল বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিগােচর করে মনন জগতে তা বিচার বিশ্লেষণ করেছেন ; বস্তুগত দিকটির পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতার সত্যাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছেন । রাষ্ট্র , শাসন , আইন , সরকার , সার্বভৌমিকতা , গণতন্ত্র, প্রভৃতি রাজনীতি বিষয়ে ধারণা প্রাচীন ভারতে কতটুকু ছিল — পরিবর্তে ধর্মনীতি , আশ্রম ,নৈতিক জীবন প্রভৃতি বিষয়ক চর্চা অধিক ঘটেছিল ।

[             ] ম্যাক্সমুলারের বক্তব্য যেমন প্রাচীন গৌরব প্রকাশ করে আবার উপনিবেশিক মানসিকতায় যারা ভারতকে ব্যাখ্যা করেন তাদের মতে প্রাচীন ভারতের শাসন রীতি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের রূপ নিয়েছিল । তারা আরাে বলেন যে ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলেই ভারতীয়রা প্রথম যথার্থ শাসনের স্বাদ পায় । ম্যাক্সমুলার ব্যাখ্যা অনুযায়ী এমন একটি দেশের সন্ধান যদি চাওয়া হয় যেখানে স্বর্গ নেমে এসেছে , সর্বোত্তম বৃত্তিগুলির বিকাশ ঘটেছে , জীবনের সমস্যা নিয়ে গভীর চিন্তাও করা হয় , সকল ক্ষেত্রেই ভারতের নাম উল্লেখ করা যায় । মতবিরােধ যাই থাকুক ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার ব্যাখ্যা তার নিজস্ব সামাজিক , সাংস্কৃতিক বিধিব্যবস্থার ভিত্তিতে পর্যালােচনা করতে হবে । প্রাচীন রাষ্ট্রচিন্তা নিয়ে ব্যাখ্যা পাওয়া যায় । 
             
             
[             ] বিদেশী গবেষক ম্যাক্সমুলার , গিবন , গ্রীণ কিথ হপকিনস প্রমুখ ভারতীয় গবেষক রমেশচন্দ্র দত্ত, বাল গঙ্গাধর তিলক , এন . সি . বন্দ্যোপাধ্যায়, ভি.এস আগরওয়াল প্রমুখ । আবার একদল চিন্তাবিদ নিরপেক্ষ বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাচীন ভারতে ও রাজনীতি বিষয়ক চর্চা করেছেন যেমন — ডি . ডি কোসম্বি , এ . এল . ব্যাসাম , জে . পি. শর্মা, রােমিলা থাপার , কে , এস.পাণিকর প্রমুখ ।
             
            
[              ] সাধারণভাবে বলা যায় আর্যদের ভারত আগমন ও বৈদেশিক সভ্যতার শুরু ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস শুরু। তবে প্রাক ঐতিহাসিক ভারতে আদি সাম্যবাদী সমাজ স্তরে বিরাজ করত শান্তি, সমতা ,সমান অধিকার প্রভৃতি লক্ষ্য করা যায় । 
              
[              ] কৌটিল্য পূর্ববর্তী সময়ে প্রত্যক্ষভাবে রাজতত্ত্ব নিয়ে আলাদা ও স্বয়ং সম্পূর্ণ আলােচনা করেছে এরূপ গ্রন্থ পাওয়া যায় না । তবে রামায়ণ , মহাভারত , বিভিন্ন পুরাণ গ্রন্থসমূহ প্রভৃতিতে প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায় । প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার উল্লেখযােগ্য রচনাগুলি হল- রমেশ মজুমদারের Corporate Life in Ancient India (1918 ), শ্যামশাস্ত্রীর “Evolution of Indian Polity (1920 ) for 4. Tanests Public Admin istration in Ancient India (1916 ) কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রডি. ডি . কোসাম্বির “ The Culture and Civilization of Ancient India , এ . এস অলটেকারের “ State and Government in Ancient India প্রভৃতি।


 প্রথমতঃ প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার রাষ্ট্রের প্রয়ােজন সমাজ শৃঙ্খলার স্বার্থে — এক্ষেত্রে প্রজা রাজাকে আনুগত্য দেখাবে রাজা প্রজাপালন করবে । মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের প্রয়ােজনীয়তা নাই । 
              
 দ্বিতীয়তঃ প্রাচীন ভারতে রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ইহার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ধর্ম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা । ইউরােপের Divine Origin of State তত্ত্বে বলেছেন যেমন ব্যাখ্যা করা হয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি ঈশ্বরের বিধান সমরূপ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার রাষ্ট্র সৃষ্টি ধারণা পােষণ করা হয় । 
              
 তৃতীয়তঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার রাজদণ্ড নীতির তুলনায় ধর্মদণ্ডনীতি অধিক গ্রহণ যােগ্য ছিল । 
              
 চতুর্থতঃ বৈদিক যুগের রাষ্ট্র সমাজ নিয়ন্ত্রণে বিধাতা সভা , সমিতিগণ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ।
               
 পঞ্চমতঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্র ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যের অন্যতম আলােচ্য বিষয় অর্থশাস্ত্র ঐতিহ্য অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী শাসন , শৃঙ্খলা, শক্তি ও বিচারের পথে লক্ষ্য অর্জিত হবে । ন্যায়ের প্রতীক হলেন দণ্ডধারী রাজা । কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র -১৯০৫ সালে পণ্ডিত শ্যামশাস্ত্রী জনসমক্ষে — দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজনীতিকে রাষ্ট্রকে অধিকার ও পরিচালনার বিজ্ঞান হিসাবে ব্যাখা করা হয়েছে । 
              
 ষষ্ঠতঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল হই জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের নীতি আদর্শ সাথে সম্পর্ক যুক্ত। বৈদিক চিন্তাধারা সংকীর্ণতার প্রত্যুত্তরে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম ভারতীয় সমাজে প্রাধান্য বিস্তার করে । জৈন ধর্ম অনুযায়ী ক্রোধ , অভিমান , লােভ জয় করতে হবে , নগরের কল্যাণকারী হবেন রাজা , রাজা হবেন সংযমী , নারী সঙ্গ ও কামনা ত্যাগী ধর্মপ্রাণ সুবংশজাত , সদাচারী সত্যবাদী ও প্রজাপালক ।
               
 সপ্তমতঃ প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্রচিন্তা চার্বাক দৃষ্টিভঙ্গির ও নৈতিকতা ভিত্তিক আলােচনা করা যায় । কমণ্ডকের নীতির আলােচনা রাজনীতিতে নৈতিকতার গুরুত্ব দিয়েছে । রাজ্যশাসনে , শাসকের দায়বদ্ধতা , মূল্যবােধ , প্রজাপালন প্রভৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । চার্বাক দর্শন প্রাচীন ভারতীয় রাজনীতি চর্চার একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি । চার্বাকরা বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেকোন বিষয় অনুধাবন করতে চায় । 
              
 অষ্টমত : প্রাচীন ভারতের রাষ্ট্র চিন্তায় মূলত রাজতন্ত্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা থাকলেও শাসনকার্য পরিচালনার দায়ীত্বশীলতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল । নানান প্রতিষ্ঠান যথা সভা , সমিতি , প্রভৃতির মাধ্যমে দায়িত্বশীলতা কার্যকারী করার প্রচেষ্টা হয়েছে । 
              


প্রসঙ্গত প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা আলােচনা প্রসঙ্গে খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের ষোড়শ মহাজন পদ , সার্বভৌম রাষ্ট্র মগধ , কুষান সাম্রাজ্য, সাতবাহন প্রভৃতি শাসনব্যবস্থার উল্লেখ করতে হবে । 


সর্বোপরি বলা যায় ভারতীয় চিন্তায় রাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের গুরুত্ব আগে দেওয়া হয়েছে । পরিবার থেকে সমাজ সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নৈতিক কর্তব্য পালনে শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবেশ তৈরি করে রাষ্ট্র । প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্র চিন্তায় প্রাচীন সাহিত্য ও ধর্মগ্রন্থ সমূহ সে সময়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থার ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হয় । সমাজ পরিবর্তন ও প্রয়ােজন নিজস্ব বৈশিষ্ট্য সমন্বিত করে প্রাচীন ভারতীয় সমাজ রাষ্ট্র চেতনার প্রসার ঘটায়। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন